বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
দীর্ঘ সাত বছরের মাথায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমানে কমিটিকে ব্যর্থ দাবি করে কাউন্সিলরের ভোটে আগামীর নেতা নির্বাচন করতে চান ভোটাররা। আগামী জাতীয় নির্বাচন মাথায় রেখেই নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে কাউন্সিলের বিকল্প নেই এমনটাই দাবি করেছেন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে গতবারের মতো এবারও কেন্দ্র থেকে কমিটির ঘোষিত হবে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময়ের পর আয়োজিত এ সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত ) ফরিদুল আলম বলেন, সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ৩৫১ জনের কাউন্সিলর তালিকা করা হয়েছে। সকাল ১০টায় প্রথম অধিবেশন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সম্মেলনের উদ্বোধন ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যরা। প্রথম অধিবেশন শেষে বিকেলে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে দ্বিতীয় অধিবেশন হবে। সেখান থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের কর্ণধার চূড়ান্ত হবে।
জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সিরাজুল মোস্তফা ও মুজিবুর রহমানকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ দুইজন প্রায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করেন। সিরাজুল মোস্তফার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রস্তাবিত জেলা কমিটিতে সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে। এই সাত বছরে বহুবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু কভিড পরিস্থিতসহ নানা কারণে সম্মেলন হয়নি। তবে এবারের সম্মেলন করার সব আয়োজনই সম্পন্ন করা হয়েছে।
পরিবর্তনের আশায় অনেক নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা বেরিয়ে এসেছেন খোলস ছেড়ে। বর্তমান কমিটিকে ব্যর্থ ও অযোগ্য দাবি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই জেলা আওয়ামী লীগের রূপরেখা সাজানো হবে এমনটা বিশ্বাস নিয়েই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দাশ বলেন, ত্যাগী ও তৃণমূল কর্মীদের মনোবাসানা পূরণের লক্ষ্যে আমি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছি। এ কারণে আমি দুই বছর ধরে কাজ করছি। আমি চাই কাউন্সিলের ভোটে নেতা নির্বাচন হোক। পরিবর্তন আসুক। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শেষ কথা। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আগের কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানকে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারমুক্ত হবেন সভাপতি। আর এতে বর্তমানের চেয়েও সচল হবে আওয়ামী লীগ। তবে আরেকটি মহল বলছে, এমনটি হলে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতৃত্ব হারিয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে এক ডজনের বেশি নেতা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি কেন্দ্রেও সমানতালে লবিং করছেন। এদের মধ্যে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল আলম, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান বাহাদুর মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চেষ্টা করছেন। এছাড়া বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ দাশ, মহেশখালি- কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, মাহাবুবুর রহমান ও সদস্য রাশেদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করছেন। তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান আগামী কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের যেকোনো একটি পদের কেন্দ্রে জোর তদবির চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটি রাজাকারের ছেলেদের আওয়ামী লীগে পুনর্বাসন করেছে। টাকার বিনিময়ে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। এসব কারণে তৃণমূলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে তথ্য আছে এতে কিছুটা পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার ঘুরে গেলেন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা দেবেন, সেটিই ধারণা করছি। নেত্রীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ পরিবর্তনে বিশ্বাসী। এখানে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি যেভাবে চাইবেন সেভাবেই আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
ভয়েস/আআ